ইলেকট্রনিক সিগারেট কি নিরাপদ !
স্টাফ রিপোর্টারঃ ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট ব্যাটারি চালিত এক ধরনের যন্ত্র। তো এই জিনিস দিয়ে কী হয়? যারা ধূমপান ছেড়ে দিতে চান তারা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতেই এই ই-সিগারেট পান করেন। কি থাকে এই ই-সিগারেটের ভেতর? ইলেকট্রনিক সিগারেটের ভেতরে থাকে নিকোটিনের দ্রবণ যা ব্যাটারির মাধ্যমে গরম হয়। এর ফলে ধোঁয়া তৈরি হয়। এটি মস্তিষ্কে ধূমপানের মতো অনুভূতির সৃষ্টি করে।
গত কয়েক বছর ধরে সারা বিশ্বে ইলেকট্রনিক
সিগারেটের প্রচলন বেড়েছে। তবে ইউরোপসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে এই সিগারেট
নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, যারা ই-সিগারেট সেবন করছেন তাঁদের
স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। দি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত
একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, ই-সিগারেটে আছে জীবাণুনাশক ফরমালডিহাইড,যেটি
ক্যানসার তৈরির উপাদান। জানুয়ারির ২৮ তারিখে ক্যালিফোর্নিয়া হেলথ
ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
ই-সিগারেট
মানুষের জন্য হুমকি স্বরূপ এবং এটিকে
আইনের আওতায় আনা উচিত। ই-সিগারেট কতটা নিরাপাদ এই বিষয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক
ওয়েবসাইট ওয়েবএমডিতে প্রকাশিত হয়েছে একটি প্রতিবেদন। আসুন জেনে নিই কী
রয়েছে ই-সিগারেটে। গবেষকরা বলছেন, ই-সিগারেটে কী রয়েছে এর কোনো সহজ উত্তর
নেই। কারণ ই-সিগারেট তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ তত্ত্বাবধায়নের জন্য কোনো
ব্যবস্থা নেই। এর কোনো নির্ধারিত মান নেই। কী কী উপাদান দিয়ে এটি তৈরি হয়
সে সম্বন্ধেও কোনো সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয় না। ফুড অ্যান্ড ড্রাগ
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)রিভিউর ফলাফলে দেখা গেছে, ১৮টি বিভিন্ন
ই-সিগারেটের কয়েকটির মধ্যে টক্সিক এবং কারসিনোজেনিক ক্যামিক্যাল পাওয়া গেছ।
কারসিনোজেন ক্যানসার তৈরিকারী উপাদান। এর মধ্যে নিকোটিন রয়েছে। ফলাফলে বলা
হচ্ছে, ই-সিগারেট তৈরির মান নির্ণয়ের পদ্ধতিটি অসংগত। এ ছাড়া ই সিগারেটে
আরো কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো জানা উচিত :
ই-লিকুইড: ই-লিকুইড অথবা ই-জুস। এগুলো এমন
এক ধরনের দ্রবণ যেগুলো তাপ উৎপাদন করে এবং অ্যারোসোলে রূপান্তর হয়। যেটা
বাষ্পায়িত হয়ে বুকের ভেতরে প্রবেশ করে। নিকোটিন: ই-সিগারেট এবং সাধারণ
সিগারেট দুই ধরনের সিগারেটেই নিকোটিন ( নেশা জাতীয় দ্রব্য) থাকে। এটি
মস্তিস্কের মধ্য স্নায়ুতে উদ্দীপকের কাজ করে। এটি রক্তচাপ, শ্বাসপ্রশাস এবং
হৃদস্পন্দন বাড়ায়। ‘মানুষ সাধারণত ধূমপান করে নিকোটিনের কারণে’, বলে
জানিয়েছেন গবেষক ডাক্তার মেসিজ গনিওইজ। তিনি নিউইর্কের রসওয়েল পার্ক
সেন্টারের ইনস্টিটিউট ইন বাফেলো এর টোবাকো এবং ই- সিগারেট বিশেষজ্ঞ।
‘নিকোটিনের নেশা তৈরি করে। কিন্তু এটি ক্যানসার তৈরির কারণ নয়। কিন্তু
ই-লিকুইডে থাকা অন্যান্য উপাদান বেশ উদ্বেগ জনক।’ ফ্লেভোরিংস: ডাক্তার
গনিওইজ জানান, একশোরও বেশি স্বাদের
ই-সিগারেট রয়েছে। চেরি, চিজ কেক, সিনামোন,
টোবাকো ইত্যাদি। এগুলো সব গন্ধযুক্ত খাবারে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে
ডায়াসেটিল রয়েছে। এটি সাধারণত পপকর্নের মাখনযুক্ত গন্ধ তৈরি করে। এর সাথে
ফুসফুসের রোগের একটি যোগসূত্র রয়েছে এবং এটি বেশ ক্ষতিকরও। প্রোপাইলিন
গ্লাইকোল (পিজি): পিজি গবেষণাগারে বানানো লিকুইড যা খাদ্য, ওষুধ এবং
কসমেটিক বানানোর জন্য নিরাপদ। এটি
রক-কনসার্টে কৃত্রিম ধোঁয়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি ফুসফুস এবং
চোখে বিরক্তির উদ্রেগ করে। এটি ফুসফুসের
বিভিন্ন রোগের জন্য ক্ষতিকর। যেমন : অ্যাজমা ও এমপাইসিমা। গ্লিসারিন: এটি
গন্ধহীন এবং বর্ণহীন। তরল গ্লিসারিন অনেকটা মিষ্টি স্বাদের হয়। এটি বিভিন্ন
পণ্যে পাওয়া যায়। ধোয়া তৈরির তরল : ই-সিগারেটে ধোয়া তৈরির জন্য এক ধরনের
ই- লিকুইড বা তরল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই ধোয়া শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে
ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এমন ক্ষতি সত্যিকারের সিগারেটেও হয় না বলে
জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালোফোর্নিয়ার অধ্যাপক বেনোউইটজ। ই-সিগারেটে
যেসব ক্যামিক্যাল রয়েছে : ই-সিগারেটে রয়েছে ফরমালডিহাইড ও এসিটালডিহাইড
নামের দুটি রাসায়নিক দ্রব্য। এই উপাদান ই-লিকুইডের তাপমাত্রা বাড়ায়।
দুর্ভাগ্যবশত এর ফলে আরো নিকোটিন তৈরি হয়। এ মধ্যে থাকা একরোলিন উত্তপ্ত
গ্লিসারিন থেকে গঠিত। এটি ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।ধূমপায়ীদের হৃদরোগের
ঝুঁকি বাড়ায়।
বস্তুকণা এবং ধাতু ই-সিগারেটের এরোসোল
রয়েছে যেটি ক্ষতিকারক। এটি শরীরে শিরাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শরীরে
বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি
করে। এবং স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলে। এ ছাড়া
বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত বা টক্সিক ধাতু ই-সিগারেটের এরোসোলের ভেতর পাওয়া
গেছে। যেমন : টিন, নিকেল, ক্যাডিয়াম, লেড ও মারকারি।
ই-সিগারেট কি নিরাপাদ? আসল সিগারেটের ধোয়া
পান করা যে ক্ষতিকর সেটি তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তাই বলে ই-সিগারেট
যে খুব নিরাপদ তা কিন্তু নয়। এটিতেও স্বাস্থ্য ঝুকি থেকেই যাচ্ছে। আমরা
সবাই জানি সাধারণ সিগারেট শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। মার্কিন এক গবেষণা
সংস্থার তথ্যমতে, সাধারণ সিগারেটে প্রায় সাত
হাজার ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে
যার মধ্যে ৬৯টি সরাসরি ক্যানসারের জন্য দায়ী। আপনি যখন ধূমপান করেন তখন এটি
আপনার আশপাশের লোকদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি ফুসফুসকে ভীষণভাবে আক্রান্ত
করে। তবে গবেষকদের মতে, যারা ধূমপান ত্যাগ করতে চান তাদের জন্য ই- সিগারেট
হয় তো মন্দের ভালো। তবে গবেষকদের পরামর্শ নিকোটিনের ওপর নির্ভরশীল না হলেই
ভালো। এতে আসল বা নকল
কোনো সিগারেটের দাসত্বই আপনকে স্বীকার করতে হবে না।
0 comments:
Post a Comment